বাংলাদেশের সংবাদপত্রে নতুন ৩ বিনিয়োগ: প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা ও দৈনিক বাংলা

বাংলাদেশের সংবাদপত্রে নতুন ৩ বিনিয়োগ: প্রতিদিনের বাংলাদেশ, কালবেলা ও দৈনিক বাংলা

আগামী শীত মৌসুমে সম্ভাব্য রাজনৈতিক ডামাঢোলের মধ্যে সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে নতুন তিনটি জাতীয় দৈনিক। প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি দৈনিকে ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের হাউজ বদল শুরু হয়েছে। এই তিনটি দৈনিক যথাক্রমে ক্রিকেটিয় টি-টুয়েন্টি, ওয়ানডে এবং টেস্ট আমেজ নিয়ে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে বাজার দখলের চেষ্টা করবে।

এগুলো হলো আবেদ খান সম্পাদিত কালবেলা, তোয়াব খান সম্পাদিত দৈনিক বাংলা এবং মুস্তাফিজ শফি সম্পাদিত প্রতিদিনের বাংলাদেশ (প্রবা)।

বিশ্বস্থ সূত্র মতে, এর মধ্যে সবচেয়ে বিগ বাজেটের হাইপ তুলেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। সমকালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মুস্তাফিজ শফি কালের কন্ঠ হয়ে জাগরণ থেকে ফের সমকালে হাল ধরেছেন। তাঁর একক নেতৃত্বেই এই নতুন প্রজেক্ট প্রবা। মূলত মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট বেইজ এই প্রজেক্টর অধিকাংশ থাকবে তরুণ সাংবাদিক। শতাধিক কর্মী নিয়ে ডামি সংস্করণের প্রস্তুতিপর্ব চলছে বারিধারায় ক্যাম্প অফিসে। প্রতিদিনের বাংলাদেশ এর মালিক রঙধনু গ্রুপ (প্রকাশক)। বাজারে কাগজ আনার ডেডলাইন অক্টোবর। দশ টাকার কাগজটি হবে ১৬ পৃষ্ঠার, যাদের স্থায়ী ঠিকানা হবে যমুনা ফিউচার পার্ক। সেপ্টেম্বর থেকে গণনিয়োগে যাবে এই পত্রিকা। পত্রিকাটিতে সম্পাদকের পরামর্শে বিশিষ্ট দুইজন প্রাক্তন সাংবাদিক কনসালটেন্ট কাজ করবেন নেপথ্যের কর্মী হিসেবে। দীর্ঘমেয়াদী টেস্ট ম্যাচ প্রস্তুতি নিচ্ছে এই পত্রিকাটি।

মুস্তাফিজ শফির সঙ্গে ইতোমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন একঝাক মেধাবী ও তরুন সাংবাদিক। রয়েছেন উপ সম্পাদক মশিউর রহমান টিপু, সহযোগী সম্পাদক ইমতিয়ার শামীম, পরিকল্পনা সম্পাদক (সারাদেশ) রমেন বিশ্বাস, ফিচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ, চিফ রিপোর্টার আজিজুল পারভেজ, বানিজ্য সম্পাদক মজুমদার বাবু, টেকনোলজি সম্পাদক রাশেদ মেহেদী, ডিজিটাল মিডিয়া প্রধান রিয়াজুল আলম রাব্বি প্রমুখ। তাদের বেশির ভাগই মুস্তাফিজ শফির দীর্ঘদিনের পরিক্ষিত সহযাত্রী।

মুস্তাফিজ শফি এর আগে তিন বছরের বেশি সময় দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথম আলোতে ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, সমকালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছাড়াও বার্তা সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক এবং কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে কালবেলা নামের পত্রিকার প্রকাশক বিশ্বাস বিল্ডার্স। এদের ডেডলাইন ২৫শে সেপ্টেম্বর। কিংবদন্তি সাংবাদিক ও বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জনক ওপেন সিক্রেট খ্যাত আবেদ খান এই কাগজের ফেস ভ্যালু হিসেবে কাজ করবে। ৫ টাকা দামের ১২ পৃষ্ঠার এব কাগজে চূড়ান্ত নিয়োগ চলছে। এরা টি-য়োন্টি মেজাজে বাজারে আসবে। নিউমার্কেটস্থ বিশ্বাস বিল্ডিংয়ে কুড়ি তলার ভবনের সাততলায় এদের স্থায়ী অফিস। ১৯৬২ সালে ১৭ বছর বয়সে ছাত্রাবস্থায় আবেদ খানের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় দৈনিক ‘জেহাদ’ পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৬৩-তে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক-এ যোগ দেয়ার মাধ্যমে শুরু করেন এক দীর্ঘ কর্মসাধনাময় অধ্যায়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি পর্যায়ক্রমে শিফট-ইনচার্জ, প্রধান প্রতিবেদন, সহকারী সম্পাদক ও কলামিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

অপরদিকে দৈনিক বাংলার সম্পাদক তোয়াব খান। যদিও গত ছয়মাসে হাউজ গুছিয়েছেন একসময়ের প্রথম আলোর জাঁদরেল রিপোর্টার শরিফুজ্জামান পিন্টু। ৪ঠা সেপ্টেম্বর এদের প্রকাশকাল! দশ টাকার কাগজে থাকবে ১৬ পৃষ্ঠা। এদের স্থায়ী অফিস তেজগাঁও। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে বর্তমানকে মেলবন্ধন ঘটাবে এই কাগজ। রাজধানীর তেজগাঁও লিংক রোডে প্রকাশিতব্য দৈনিক বাংলা পত্রিকা এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের যৌথ কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপদেষ্টা সম্পাদকই দৈনিক বাংলা লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, প্রকাশক শাহনুল হাসান খান। নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে প্রায় দুই যুগ আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক বাংলা। সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন একুশে পদক পাওয়া বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদকও ছিলেন তোয়াব খান।

বিশ্বস্থ সূত্র মতে, আজকের কাগজ পত্রিকায় বছর না ঘুরতেই একটি টিম যোগ দিয়েছে দৈনিক বাংলায়। সমকাল ও চ্যালেন টুয়েন্টি ফোর থেকেও অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক যোগ দিচ্ছে প্রতিদিনের বাংলাদেশে। এছাড়াও ঢাকার মিডিয়ায় তরুণ সাংবাদিকদের অনেকেই এই তিন প্রজেক্টে যোগ দিচ্ছেন।

করোনাকালে সাংবাদিকতার বাজার ছোট হয়ে এলে প্রকাশনা জগতে ধাক্কা পড়ে। ফলে ছাঁটাইয়ের কবলে পড়েন বহু সাংবাদিক। মিডিয়াপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য নিয়ে হাহাকার চলছে। প্রতিষ্ঠিত ও দাপুটে পত্রিকাগুলো মাল্টিমিডিয়া বেইজ কনভার্জেন রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন পর নতুন তিনটি দৈনিকের প্রকাশনা প্রস্তুতিতে দেশের সাংবাদিকতায় সুবাতাস বইছে।