‘ডুব’ সিনেমার কাহিনি একজন ঢাকাইয়া মধ্যবয়স্ক স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে। ছবির নায়ক জাবেদ হাসান। তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে মেয়েরই সহপাঠীকে বিয়ে করেছেন। এরপর শুরু হয় ঢাকার উচ্চবিত্ত একটি পরিবারের সম্পর্কের টানাপড়েন। এটি মূলত বাংলাদেশের বিখ্যাত একজন সাহিত্যিকের জীবনের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ভারত ও বাংলাদেশের মোট ৭৩টি হলে মুক্তি পায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’। সিনেমাটি সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বলে সেন্সর বোর্ডে আটকে যায়। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি এই সিনেমায় চিত্র পরিচালকের ভূমিকায় (জাভেদ হাসান) অভিনয় করেছেন ইরফান খান। একজন সৃজনশীল মানুষ জাভেদের জীবনে অসময়ে আসা ভালবাসার অসহায়ত্ব নিয়ে পুরো সিনেমাটি আবর্তিত হয়। যেখানে অসম বয়সের প্রেম, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আর তাকে ঘিরে একটি ছিমছাম আপাত সুখী পরিবারের সদস্যের মধ্যবিত্ত অসহায়তা দেখানো হয়েছে।
ইরফান খান নিজের মুখে বাংলা বলেছেন কিন্তু সেই বাংলায় হিন্দি টান রয়েছে। রয়েছে অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি সংলাপ। বলিউডের যে টলমল চোখের প্রেমিক অভিনেতা ইরফান খান, তাকে জোর করে এই সিনেমা করানো হয়েছে বলে মনে হলো। অসহায় ও বিক্ষুদ্ধ স্বামী পরিত্যক্ত নারীর সংগ্রামী চরিত্রে রোকেয়া প্রাচীর অভিনয় প্রশংসনীয়। বাবার প্রতি একই সঙ্গে ভালোবাসা আবার অভিমান, রাগ ও চাপা ক্ষোভের মিশ্র দৃশ্যকাব্য রচনা করেছেন তিশা।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কোনো সিনেমা বা নাটকই আমার ভালো লাগেনি। ‘চড়ুইভাতি’ দেখার পর তাঁর কাজগুলোকে আর সেভাবে মনযোগ দিয়ে দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু এই সিনেমায় তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে কিছু দৃশ্য আমাদের দেখান, যা চোখকে আরাম দেয়।
ইরফান খান এই সিনেমায় প্রাণবন্ত হলেও চরিত্রের সাথে বাস্তবধর্মী নন। হুমায়ূন আহমেদের জীবন যাপনের ‘বহুবিচিত্র সমগ্রক’কে না ধরে ‘খণ্ডিত একক’কে দৃশ্যায়ন করেছেন ফারুকী। ডুব সিনেমা বানিয়ে ততটা ডুব দিতে পারেনি ফারুকী, যতটা ডুব দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মত রহস্যময় ও খামখেয়ালি সমুদ্রের তলা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। ফলে- এককথায়, ভালো লাগেনি এই সিনেমা। কিন্তু মোরাল অফ দ্যা স্টোরিকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সিনেমার শক্তিশালী সংলাপটি হলো, জাভেদ তার মেয়েকে (তিশা) বলছেন, “Do you know when people die? People die when they become irrelevant to the world… or when the world becomes irrelevant to them” (মানুষ মারা যায় তখনই যখন প্রিয়জনের সঙ্গে তার যোগাযোগহীনতা তৈরি হয় কিংবা প্রিয়জনেরা তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে।)
সিনেমার দ্বান্দ্বিক চরিত্র পার্নো মিত্র। অস্থির, চঞ্চল আর খামখেয়ালিপনায় ভরা কিশোরী। যে কিশোরী মধ্যবয়স্ক ইরফানের জীবনে অকাল বোধনের মতো হুড়মুড় করে চলে এসেছেন। মানুষের জীবনে দুই ধরণের মানুষ আসে। ঠিক সময়ে বেঠিক মানুষ আর ভুল সময়ে সঠিক মানুষ! এই ঠিক বেঠিকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মানুষ ক্রাইসিসে ভুগে। ইরফান খান সেই ক্রাইসিস ক্যারেক্টার এই সিনেমার। এই সময়টিকে আমি বলি, There’s no such right person at the wrong time…if that is the right person then it will be the perfect time. The people we meet at the wrong time are just actually wrong people because the right person will stay irrespective of whether the time is right or wrong.
নেটফ্লিক্সে আছে এই সিনেমা। সিনেমার ‘আহারে জীবন’ বহুবার শোনা আমার প্রিয় গান হলেও সিনেমাটি দেখবো দেখবো করেও দেখা হয়নি। সম্প্রতি এক বন্ধুর মুভি সাজেশনে গতকাল রাতে দেখে ফেললাম।