মিলান কুন্দেরার কথা ধার করে শুরু করি- ‘উপন্যাসটি আমাদের শিখিয়েছে কী ভাবে এই পৃথিবীকে বুঝতে হয় প্রশ্ন দিয়ে।’ এই বইয়ের পাতায় পাতায় ভাগ্যবিড়ম্বিত নায়কের জায়গায় নিজেকে দেখে খুব অবাকও হয়েছি। ডন কুইক্সোট বইকে বলা হয় অমর সাহিত্যকর্ম। সপ্তদশ শতকে লেখা এই বইটিকে প্রথম আধুনিক উপন্যাস ও স্পেনীয় ভাষায় রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে অভিহিত করা হয়! বলা হয়, বইটির অন্ততপক্ষে বিক্রি হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন কপি। দুই খণ্ডের এই উপন্যাসের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৬০৫ সালে।
উপন্যাসে চারটি চরিত্র। ডন কুইক্সোট অভ লা মানচা, যিনি নায়ক। তাঁর ধারণা, তাঁর মত বীর এই গ্রহে আর নাই। সমকক্ষ কেউ জন্মাবেও না। সাংকো পানযা, বিচিত্র কারণে ডনকে সে খুব পছন্দ করে। ডন এর সহকারী এবং তার ভ্রমণসঙ্গী। ডালসিনিয়া দেল টোবাসো, ডন কুইক্সোট অভ লা মানচার কাল্পনিক প্রেমিকা। ডনের ধারণা, টোবাসোর মত সুন্দরী এই গ্রহে দূরের কথা, অন্য গ্রহেও নাই। রোজিন্যান্ট, একটি হাড়জিরজিরে ঘোড়া। ডনের একমাত্র বাহন। ডনের ধারণা, রোজিন্যান্টের মত তেজি ঘোড়া পৃথিবীতে আর একটিও নেই । যদিও রোজিন্যান্ট দু’কদম দিলেই হোঁচট খেয়ে পড়ে। ড্যাপল, একটি গাধা। সাংকো পানযার বাহন!
সাহিত্য রস ও কল্পনাশক্তির বিকাশের কারণে উপন্যাসটিকে প্রথম আধুনিক উপন্যাস হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আধুনিক অনেক ঔপন্যাসিক ও অনেক লেখকের কাছে ‘সাহিত্যের বাইবেল’ এই উপন্যাস। ডন আর সাংকো, দুজনই একের পর এক ব্যর্থ অভিযানে তারা পরস্পরের সংগী ছিল। কিন্তু মনে মনে তাঁরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা পোষন করতেন। ভ্রমণে অতি উৎসাহী এবং অতি উত্তেজিত ডন কুইক্সোট পুরো উপন্যাসেই বাস্তবতা বর্জিত।
উপন্যাসের শেষে ট্র্যজেডিতে দেখা যায়- ডন কুইক্সোট অভ লামানচা ফিরে যান তার নিজ গ্রামে। মৃত্যুশয্যায় যিনি বুঝতে পারেন সমগ্র জীবনের র্নিবুদ্ধিতার কথা। তিনি ছিলেন এক ঘোর লাগানো নায়ক, যিনি আসলে সরল-উন্মাদ। যিনি বায়ুকলের বিরুদ্ধে লড়তেন, শত্রু মনে করে। সরাইখানাকে ভাবতেন শত্রুর দুর্গ। দিনের পর দিন মধ্যযুগীয় নাইটদের বীরত্বের কাহিনি পড়তে পড়তে ভাবতে শুরু করে দিলেন যে তিনি নিজেই এক জন নাইট, অর্থাৎ ন্যায়রক্ষাকারী যোদ্ধা। যিনি একদিন বেরিয়ে পড়েন ঘোড়া নিয়ে, দ্বিগিদিক জয়ের নেশায়… অতপর ট্র্যাজিক হিরোর মতো মারা গেলেন একদিন!
তবে তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘জীবন যেরকম, সেটা খুবই ক্লান্তিকর। জীবন যা হতে পারে তারই স্বপ্ন দেখা উচিত।’