
অন্তর্জালে আমাকে খুঁজে নিতে চাইলে:-
২০১০ সালের এক শীতার্ত দিনে যখন বিমানের পাখায় ভর দিয়ে আমি উড়ে যাচ্ছি ইউরোপের দিকে, তখন আমার মাথার ভেতর ছটফট করছিলো হাজারো স্বপ্ন। একটি ‘অনুন্নত’ দেশ থেকে একটি ‘উন্নত’ দেশে আমার পা রাখার পথটি কখনোই মসৃন ছিল না এবং স্বাভাবিকভাবেই আমার গল্পের সেখানেই শেষ না।
সেই প্রবাসতীর্থের ১২ বছর পর আজকে আমি একজন সমাজ অন্ধিৎসু গবেষক, মোবাইল জার্নালিস্ট, একজন বিদ্যায়তনিক কর্মী, বলতে দ্বিধা নেই- সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে একজন ‘মিমার’ও! জীবন হলো প্রতিদিন বিবিধ অত্যাশ্চর্যভাবে নিজেকে আবিস্কার করা। সেদিন সুইডেনের দিকে উচ্চ শিক্ষার জন্য উড়ানযাত্রার ১০ বছর আগের আমি কল্পনাও করিনি, এমন কিছু হবে। তবে মনে আছে, আমার ব্রত ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ সুফলটুকু নিয়ে সফল একজন শিক্ষার্থী হওয়া। একজন তরুণ সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশের সে সময়ের সেরা পত্রিকার লিড নিউজ আমার হাত দিয়ে হতো, আজ ভাবতেই মুগ্ধ হই। তবে শুধু কাজ পাগল না, ছিলাম প্রচন্ড আড্ডাবাজ।
বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে যাত্রার অংশ হিসেবে আমি এখন আছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে। ২০১২ সালে শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের তিনটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদিকতা করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন ছাড়াও সুইডেন সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ইয়ংশেপিং ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ এডুকেশন এন্ড কমিউনিকেশন এ মিডিয়া স্টাডিজ পড়েছিলাম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাধিক গবেষণাধর্মী বিদ্যায়তনিক সাময়িকীতে আমার ১৫টির বেশি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিতব্য/প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক একটি সেমিনারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংঘাত বিষয়ক প্রবন্ধ (যৌথ) রচনার মধ্য দিয়ে বিদ্যায়তনিক জগতে গবেষণার হাতেখড়ি। ২০১৮ সালে ভারতের ‘দিল্লী মেট্রোপলিটন এডুকেশন’ এবং ২০১৯ সালে পশ্চিমবাংলার ‘বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক পৃথক দু’টি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ‘বেস্ট পেপার এওয়ার্ড’ লাভ করাটাও আমার কাছে পরম গর্বের বিষয়। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের সংবাদপত্রের পৃষ্ঠাসজ্জায় প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্যের বিবর্তন’ বিষয়ক চবি’র গবেষণা ও প্রকাশনা শাখার আর্থিক আনুকূল্যে একটি গবেষণা সম্পন্ন করি। বর্তমানে করোনাকালে যোগাযোগ বিন্যাস, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্লোগান ও দেয়াল লিখন, ভারত-বাংলাদেশে গণপিটুনির মাত্রা ও পরিসর, মোবাইল জার্নালিজম নিয়ে বিদ্যায়তনিক গবেষণা ও তৎপতায় আমি সক্রিয়।
ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ছাড়াও নিজ বিভাগকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বির্তক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং চট্টগ্রামের ডিসট্রিক লিও ক্লাবের রানার্সআপ হওয়ার স্মৃতিও আমার কাছে মনে রাখার মতোই। ভ্রমণপ্রিয় আমি সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, মালয়েশিয়া ভ্রমণের পাশাপাশি ভারতের নয়াদিল্লী, লউখনো, আসাম, উড়িষ্যা, রাজস্থান, ত্রিপুরা, এবং পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে একাধিক গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন এবং আমন্ত্রিত/অতিথি বক্তৃতা দিয়েছি এই স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকেই।
নয়ামাধ্যম প্রযুক্তি, বিশেষত মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম এবং মোবাইল জার্নালিজম (মোজো) নিয়ে একাডেমিক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যম শিক্ষক-প্রশিক্ষক ও সাংবাদিকদের যূথবদ্ধ যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্দো–বাংলা মিডিয়া এডুকেটর্স নেটওয়ার্ক’র প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছি দীর্ঘদিন। বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে সমসাময়িক ইস্যুতে নিয়মিত নিবন্ধ লেখার চেষ্টা করি।
মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের সেই উক্তি- ’যে যাবে বহুদূর, তাকে বলি ধীরে হাঁটো’! অপরিচিত কোনো স্থানে নিজেকে আবিস্কার করা আমার নেশা। দেশভ্রমণ, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া আমার শখ। আমি অবসর খুব পাই না। বই পড়া, সিনেমা ও ওয়েবসিরিজ দেখা এবং পড়ানোর প্রস্তুতি নিতেই আমার দিন চলে যায়। আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, প্ল্যান করতে। আর সেই প্ল্যান যখন বাস্তবায়ন হতে দেখি, তাতে আমি খুশি হইনা। কারণ, এটি হওয়ারই কথা- এই আত্মবিশ্বাস আমাকে জীবন্ত রাখে।